বিদেশীদের সাথে কাজ করে আমি কি শিখলাম?
(বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া)
আমি একজন ফ্রিল্যান্সার (WordPress Expert) হিসেবে বাইরের দেশের লোকদের সাথেই দিন রাত কাজ করতে হয়। এই সুবাদে তাদের সাথে কাজ ছাড়া আরো অনেক বিষয়ে কথা ও বলা হয়। আমরা এবং তাদের আচার আচরণে দিনরাত তফাৎ। যদিও দুটি আলাদা জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক, তারপরও কিছু সাধারণ ও মানবিক বিষয় আছে যা তারা আমাদের চেয়ে বেশি মেনে চলে। চলুন আমি তাদের সাথে কাজ করে কি কি জানলাম সেগুলো জেনে নিই।
- বিশ্বাস: তারা সহজেই যে কাউকে বিশ্বাস করে। আমার এমন কিছু ক্লায়েন্ট আছে যাদের ব্যাক্তিগত ইমেইল,সোস্যাল মিডিয়া এবং সার্ভার এর এক্সেস থেকে শুরু করে ব্যাংকের কার্ড এর তথ্য পর্যন্ত আমার কাছে সব সবময় থাকে কাজ করার জন্য। আমি চাইলে যেকোন কিছু কিনতে পারি । তারা এতটাই বিশ্বাস করে যে বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনা এসবের প্রাইভেসী নিয়ে।
- উৎসাহ: তারা খুবই উৎসাহ প্রবণ হয়। প্রতিটি কাজের পরেই তারা সেই লেবেলের উৎসাহ / অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে যা কাজের গতিকে আরো দ্বিগুন করে দেয়।
- কৃতজ্ঞতাবোধ: টাকার বিনিময়ে তাদের সকল কাজ করে দেওয়ার পরেও, কাজ শেষে তারা এমনভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যেন আমি তাকে ফ্রি তে হেল্প করেছি।
- সময়ের মূল্য: আমি এমন অনেক ক্লায়েন্ট পেয়েছি যারা কোন একটা বিষয় বোঝার জন্য ৩ থেকে ৫ মিনিট মেসেজে কথা বলেছে এবং শেষে $5 থেকে $10 পেমেন্ট করেছে।
- কাজের মূল্য: আমাদের দেশে যে কাজটির মূল্য ৳৫০০ টাকা ধরে চাপিয়ে দেওয়া হয় , ঠিক একই কাজ বাইরের দেশের লোকের কাছে ৳৫,০০০ টাকা বা এর বেশি ও ধরা হয়। এমন কি কাজ শেষে তারা আবার জিজ্ঞেস যে এই মূল্যে আমি খুশি কি না। খুশি যদি নাই তাহলে যেন তাকে আবার বলি। আবার তারা বারবার জিজ্ঞেস করে কখন আমার টাকা লাগবে। যখন টাকা লাগবে সেটা তাকে বলতে যেন আমি দ্বিধা না করি।
তাছাড়া, তারা নিজের কাজ নিজেই করতে বেশি পছন্দ করে। যেসব কাজ তারা পারেনা সেসব বিষয়েই শুধু অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেয়। কাজের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের ও তফাৎ করেনা। আমাদের দেশে প্রায়েই বলে এটা মেয়েদের কাজ, সেটা ছেলেদের কাজ। কিন্তু তারা খুব একটা এমন করেনা। আমি আমেরিকার একটা এজেন্সিতে “Sr. Manager of Development & Security” হিসেবে কাজ করছি যার মালিক ও একজন মহিলা।
- খোজখবর নেওয়া: কিছু দিন আগে আমি জ্বরে অসুস্থ ছিলাম। যেকজন ক্লায়েন্টের সাথে সব সময় কাজ করি তারা প্রতিদিন সকাল বিকাল জানতে চেয়েছে যে “ এখন তোমার কেমন লাগছে?, পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার পানি ও খাবার আছে তো?, আজ থেকে সব কাজ কম করে হলেও ১ সপ্তাহ বন্ধ রাখবে। ” এমন কি আমাকে যদি অনলাইনে এক্টিভ দেখতো তাহলে সাথে সাথে মেসেজ করতো যে “তুমি তো অসুস্থ অনলাইনে কেন?” তার কাজ যে আমার জন্য বন্ধ হয়ে আছে সেটি না ভেবে আমি কিভাবে তারাতারি সুস্থ হবো সেটাই চাইতো।
- ভুল স্বীকার: বিদেশীরা সামান্যতম ভুল করলে ও তারা সেটা অজুহাত না দেখিয়ে বরং সেটা সরাসরি স্বীকার করে এবং এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা দুঃখ প্রকাশ করে। মাঝে মাঝে এমন হয়েছে যে ক্লায়েন্টর একটি ফাইল সোমবার দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে কোন কারণে দিতে পারেনি, এটার জন্য ও পরের দিন এসে দেরি করার জন্য সরি বলেছে।
- কথা বলার ধরণ: তারা সবসময় হাসি মুখেই কথা বলতে পছন্দ করে। মন খারাপ বা মনে কষ্ট থাকলেও সেটা অন্যের উপর প্রভাব পড়ুক হয়তো তারা এটা চায় না।
- ধর্ম, বংশ পরিচয় ও আর্থিক অবস্থা: তারা কাজের ক্ষেত্রে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করেনা বললেই চলে। কখনো জানতে চায় নি আমি কোন বংশের, আমার বাবার নাম কি, ধনী নাকি গরীব ইত্যাদি।
উপরের যতগুলো বিষয় আমি উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই এর উল্টো টা করে। আমাদের দেশে ও তাদের মতো মানুষ আছে কিন্তু সেটা একেবারেই কম। আমি নিজেও আগে উপরের উল্লেখিত অনেক গুলো বিষয় মেনে চলতাম না। তবে এখন নিজেকে যতটুকু পারি ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন হারে হারে বোঝতে পারি তারা কেনো আমাদের চেয়ে এতটা উন্নত।
বি:দ্র: উপরের পয়েন্ট গুলো আমি বিশেষ করে Australia, USA, UK, New Zealand,Canada, Sweden সহ আরো বেশ কিছু দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। সবার অভিজ্ঞতা একরকম না ও হতে পারে। আর আমি কিছু ভুল বলে থাকলে অবশ্যই জানাবেন এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এই লেখাতে আমি শুধু তাদের পজিটিভ দিকটাই বলার চেষ্টা করেছি। তাদের মধ্যে কিছু খারাপ দিক বা খারাপ মানুষ ও আছে।
Sukesh Das
Web Designer | WordPress Expert
Top Rated Freelancer -Upwork
Level-2 -Fiverr
0 Comments